বিজয়া

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট
  • ২৪
  • 0
  • ৯৫
অন্ধকার কাল রাত।মাঝে মাঝে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।মেঘ ডাকার শব্দ ভেসে আসছে।খুব বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে।ক্যাপ্টেনের নির্দেশে হাবিব আর সুদীপ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সীমান্তপারে পৌছে দেবার দায়িত্বে আছে।আজ তারা যে গ্রামে আছে এই গ্রামটার নাম কাশিপুর।রেলষ্টেশনের ধারে গ্রামের অবস্থান।পাকবাহিনী এখানেও পৌছে গেছে কেনা হাবিব বা সুদীপ তা জানে না।কাল দিনের পুরোটাই এখানে কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে।মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে।এখন কোনমতেই গ্রাম ছেড়ে বের হওয়া যাবে না।হলে নির্ঘাৎ ধরা পড়তে হবে।

জয়পুর হাঠের গোবরডাঙা গ্রামে একটা পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমন চালিয়ে এই মানুষগুলোকে উদ্ধার করেছে ক্যাপ্টেন হামিদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিবাহিনী।মোট চৌদ্ধজনকে তারা উদ্ধার করেছে।একজন মেয়ে।মেয়েটার জন্য একটু সমস্যাই হচ্ছে।কিন্তু বেচেঁ থাকার তাগিদে সবাই একসাথে লুকিয়ে আছে।সবসময় মৃত্যুভয়।ভয়ংকর আতঙ্ক।একরকম মৃত্যুর ছায়া থেকে বের হয়ে এসেছে ওরা।এখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে যে জায়গায় সেটা খানিকটা জংলা মত।হাবিব ভাবল শশ্নান হবে বোধহয়।কিন্তু কোন কথাই বলল না এ বিষয়ে।শশ্নানের উপর দাঁড়িয়ে মানুষগুলো যে বাচাঁর স্বপ্ন দেখছে তা তাদের না বলাই ভাল।
সুদীপ কয়েক ঘন্টা আগে বের হয়ে গিয়েছিইল গ্রামটা ঘুরে দেখে আসার উদ্দেশ্যে।সে এখনও ফিরে আসছে না।পাকবাহিনীর অস্তিত্বের খবর জানতে গিয়ে সুদীপ ধরা পড়ে গেল কি না এমন চিন্তা ও উকিঁ দিয়ে গেল হাবিবের মনে।তবুও সে শান্তভাবে বসে রইল।তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার মা,ছোট দুটি ভাই-বোনের কথা।তারা আজ কোথা আছে কে জানে!

মানুষগুলো জড় হয়ে একসাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলছিল।মৃত্যুর আতঙ্কে থাকতে থাকতে এদের গলা স্বর ও নিচু হয়ে গেছে।শুধু মেয়েটি একটু দূরে বসে আছে মাথা নিচু করে।হাবিব লক্ষ করে দেখেছে মেয়েটা কথা বলে না।সবসময় চুপ করে থাকে।সপ্তাহ ধরে এদের নিয়ে হেটে চলেছে কিন্তু মেয়েটিকে কখনও কথা বলতে দেখেমি।তবে মেয়েটার চোখের মধ্যে কি যেন আছে।যা বলে দেয় তার সব অব্যক্ত কথা।হাবিবের এরকমই মনে হয়।সে বুঝতে চেষ্টা করে।কিন্তু পারে না।

হঠাৎ গুলির শব্দে হাবিবের ঘোর ভাঙল।মানুষগুলোর ভিতর থেকে একজন বের হয়ে এল হাবিবের সামনে।হাবিব ছেলেটাকে চিনে।নাম নিরঞ্জন।তিনমাস আগে বিয়ে করেছিল।পাকসেনারা তার বউকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পে।কিন্তু যে ক্যাম্প থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় সেখানে তার বউকে পাওয়া যায় নি।

নিরঞ্জন ভয়ে ভয়ে এসে বলল, ভাই আমারে মুক্তি বানাইয়া ব্যান।কথাটা ফিস্ফিসানির স্বরে শোনা গেল।

আরও কয়েকজন নিরঞ্জনের পাশে এসে বলল,ভাই ,আমরাও মুক্তি হমু।

হাবিব আড়চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটাও তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে ও কি মুক্তি হতে চায়?

হাবিব সবাইকে বুঝিয়ে বলার ভঙ্গিতে বলল, দেখেন আমরা আগে ইন্ডিয়ায় পৌছাই।তারপর সব হবে।

বুড় মতন একটা লোক হাফিজ মুন্সী সেও দলে ছিল।হাফিজ মুন্সীর বাপ দাদা ছিল খাস মুসলিম লীগ।সে নিজেও মুসলিম লীগের সমর্থন করত।কিন্তু যুদ্ধ শুরু হল।তার দুই ছেলে যুদ্ধে চলে গেল।পাকবাহিনী এসে তার বাড়িঘর পুড়িয়ে মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল,সাথে থাকেও।হাফিজ মুন্সীও আজ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে চায়।সে খনখনে গলায় বলে উঠল, একটা শুয়রের বাইচ্চা না মাইরা আমি মরুম না।

আবার কয়েকটা গুলির শব্দ হল।আকাশের বিদ্যুৎ চমকানি আর মেঘের গুরুগম্ভীর শব্দে চিন্তিত মনে হল হাবিবকে।ঠিক এমনি সময়ত সুদীপ এল।সুদীপ এসে খবর দিল গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পাকিস্তানিদের বড় ঘাটি আছে।এখানে কাল লুকিয়ে থাকা সম্ভব না।আবার গ্রাম থেকে বের হওয়া ও এখন বিপদজনক।
সুদীপ আস্তে করে হাবিবকে জিজ্ঞেস করল, এখন কি করা যায়?

হাবিব বলল, গ্রাম ছাড়তে হবে।তুই সবাইকে তৈরী হতে বল।আমি আসছি বলে ঝড়ের বেগে বাইরে বেরিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

সুদীপ জানত হাবিব এরকমই কোন সিদ্ধান্ত নিবে।মেয়েটার প্রতি হাবিবের দুর্বলতা তার দৃষ্টি এড়ায় নি।হাবিব হয়ত এখন আবার নতুন্স্বপ্ন দেখে।যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর দূতকে সামনে রেখে নতুন করে বাচাঁর স্বপ্ন।সুদীপ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।

মিনিট বিশেক পরে হাবিব ফিরে এল।তারপর সবাই রওনা হল।জঙ্গলের ভিতরে সরু রাস্তা ধরে এগুতে লাগল।এভাবে এগুলেসামনে পড়বে মহেশহাটি।মহেশহাটি গ্রামে পাকিস্তানিদের কোন ঘাটি নেই।কালকের দিনটা পার করা যাবে।তারা সন্তপর্নে এগুতে লাগল।

যেতে যেতে সুদীপ জিজ্ঞেস করল,তুই কি মেয়েটিকে......

হাবিব স্বল্পকথায় উত্তর দিল, হ্যা।

হাবিবের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে সুদীপ বলল, ও তো ক্যাম্পে ছিল।

হাবিব মুচকি হেসে হাতের অস্ত্রটা নেড়ে বলল, যুদ্ধ আজ আমার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে,মানুষ মারতে বাধ্য করেছে।না হয় একটা মানবিক মূল্যবোধ বাড়িয়ে দিক।

সুদীপ আর কিছু বলল না। মেয়েটিকে যে হাবিব সত্যি ভালবাসে সে বিষয়ে তার কোন সন্দেহ নেই।পুরোপুরি জীবন বাজি রেখে আজ সে যে পথে ছুটছে তার পিছনেও আছে ওই মেয়ে।একটা নতুন স্বপ্ন।

কয়েকবার পাকিস্তানি টহলদার বাহিনীর চোখকে ফাকিঁ দিয়ে তারা অত্যন্ত সাবধানে তারা এগিয়ে যেতে লাগল হাবিব।একহাতে শক্ত করে মেয়েটির হাত ধরে আছে সে।যেন বিপদের মাঝে ও তাকে আগলে রাখতে চায়।

হঠাৎঅই টহলদার কয়েকজন সেনার সামনে এসে পরে গেল তারা।হাবিব ভীড়ের মাঝখানে চলে এল।চতুর জমির মুন্সী সামনেই ছিল।সে চিৎকার করে উঠল, জয় পাকিস্তান।পিছনে মৃত্যুর হাত থেকে বাচাঁর জন্য মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন সবাই সমস্বরে ধ্বনি তুলল জয় পাকিস্তান।

কি মনে করে পাকসেনারা তাদের ছেড়ে দিল।ভোরের আগেই তারা মহেশহাটিতে পৌছে গেল।


মহেশহাটি যাওয়ার পর পরই মেয়েটি প্রথম কথা বলল, এটি কোন জায়গা?

মহেশহাটি নাম শোনার পর মেয়েটার চোখ আনন্দে ছলছল করে উঠল।সে বলল, আপনাদের পায়ে পড়ি আমাকে বাড়ি পৌছে দেন।এখানে আমার স্বামীর বাড়ি।


আনন্দে উজ্জ্বল মেয়েটির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল হাবিব।তারপর বলল, ঠিক আছে।পায়ে পড়ার কিছু নেই।আপনি আসুন।আমরা আপনাকে এগিয়ে দিচ্ছি।

হাবিব এবং সুদীপ মানুষগুলোকে মোটামোটি নিরাপদ একটা জায়গায় রেখে মেয়েটিকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে যেতে লাগল।পথে কেউ কোন কথা বলল না।একটা চৌচালা টিনের ঘরের সামনে এসে মেয়েটা থামল।সে হাসিমুখে বলল, এইটাই আমার বাড়ি।আপনারা আসেন।না খেয়ে যাবেন না।

এবারই প্রথম মেয়েটা বাক্য একসাথে বলল স্বাভাবিক ভাবে।খাবার উঠতেই সুদীপের মনে হল অনেকদিন ভাল লাগছে না বলে না খেয়ে হাবিব নিজের অংশ মেয়েটিকে দিত।সবার জন্য তখন খাবারের পরিমান ছিল খুব কম।

মেয়েটি তার বাড়ির সবাইকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল।একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ এবং এক বৃধ স্ত্রীলোক বের হয়ে এল।দেখা গেল বাড়িতে আর কেউ নেই।তার শাশুড়ী চিত্তকার করে বলল, তুই ফিরে এসেছিস।অপয়া,অলক্ষী দূর হয়ে যা।তর মুখ দেখা ও পাপ।

মেয়েটয়া হঠাৎ স্তব্দ হয়ে গেল।

একটু পর দেখা গেল তার স্বামী তাকে তেড়ে মারতে আসছে।হাবিব হঠাৎঅই বন্ধুক বের করে নির্ভূল নিশানায় মধ্যবয়স্ক লোকটির বুক বরাবর ট্রিগার চেপে দিল।কাঠের টুকরা হাতে লোকটির মৃতদেহ ধপাস করে পড়ে গেল।মেয়েটার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেল না।

হাবিব মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল,তোমার নাম কি?

পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিল, বিজয়া।


হাবিব একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,বিজয়া তুমি আমার সাথে চল।বিজয়ের যুদ্ধে।

বিজয়া হাবিবের হাত ধরল শক্ত করে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিন আরফান. জানিনা কোন মুরাদ , কিন্তু লেখাটা অনেক ভালো. ভোট লেখার কাছে অনেক নগন্য. আমার বঙ্গলিপি পরার আমন্ত্রণ.
ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট ধন্যবাদ রুমানা রশীদ।
ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট ধন্যবাদ অপদেবতা।
অপদেবতা সুন্দর গল্প
ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট অনেক ধন্যবাদ বিন আরফান।আপনার বঙ্গলিপি পড়ার চেষ্টা করব।
বিন আরফান. আমে দেখা অসংখার সেরা গল্প. ভোট অনেক আগেই দিয়েছি. কিন্তু তার পর-ও ছোটে আসি কেননা ভালো লিখা আমায় পিছু টানে. বন্ধু, কেমন আছন. ? আমার বঙ্গলিপি পরার আমন্ত্রণ রইল, আশা করি আপনার ভালো লাগবে.
ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট সাইফুল ইসলাম চৌধুরী পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সূর্য ছোট গল্পের সার্থকতা এখানেই, শেষ হইয়াও হইলনা শেষ........ অপূর্ব.....
বিন আরফান. কত দিন দেখি না মায়ের মুখ, শুনিনা সেই কোকিল নামের কলা পাখির গান হায়রে পরান, হায়রে পরান! আজ আপনার লেখা পড়তে পেরে আমার সেই বেথা ভুলে গেছি. আর বেশি কিছ লিখতে গেলে আমি বেহুশ হয়ে যাব. অনেক অনেক দুয়া রইল. চালিয়ে যাও ভাই. আর আমার বঙ্গলিপি মনে চাইলে দেখ.
বিষণ্ন সুমন অনেক সুন্দর একটা গল্প, বেশ ভালো লাগলো

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪